পুরুষদের শরীর ও জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে পুরুষাঙ্গ। প্রাকৃতিকভাবে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের গোপনস্থানের আশেপাশে ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে চুল ও অবাঞ্ছিত লোম জন্মায়। গোপনঅঙ্গের আশেপাশে যে লোম বা চুল জন্মায় সেগুলোকে অবাঞ্ছিত লোম বলা হয়ে থাকে। শারীরিক সুস্থতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও গোপনঅঙ্গের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত গোপন স্থানের অবাঞ্ছিত লোম বা চুল পরিষ্কার করা উচিত। এছাড়াও পুরুষ ও মহিলা উভয়ের গোপনস্থানের আশেপাশে থাকা চুল বা লোম পরিষ্কার রাখার বিষয়ে ধর্মীয় দিকনির্দেশনা রয়েছে। ইসলাম ধর্মে পুরুষাঙ্গ বা যৌনাঙ্গের আশপাশের লোম পরিষ্কার করা একটি সুন্নত এবং পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যা কিনা ইস্তিহদাদ (اِسْتِحْدَاد) নামে পরিচিত। সম্মানিত পাঠক, আজকের লেখাজুড়ে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো সঠিকভাবে পুরুষাঙ্গের চুল কাটার নিয়ম সম্পর্কে।
পুরুষাঙ্গের চুল কাটার জন্য প্রস্তুত হওয়া
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে বিশেষ করে যাদের মাত্র অবাঞ্ছিত লোম উঠা শুরু হয়েছে। তারা প্রথমবার এই লোম কাটার সময় বেশ উত্তেজিত থাকে। বেশ লুকোচুরি খেলে তাই তাড়াহুড়ো করে চুল কাটে। আপনি যে বয়েসেরই হয়ে থাকেন না কেন প্রথমেই নিশ্চিত করুন পুরুষাঙ্গের চুল কাটার জন্য আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে। কারন তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সঠিকভাবে চুল কাটাও হয় না এবং কেটে যাওয়ার বা আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
গোপনঅঙ্গ যেহেতু সংবেদনশীল যায়গা সেহেতু সেভার ব্যবহার করে পুরুষাঙ্গের চুল কাটা সবচেয়ে উত্তম ও নিরাপদ। এতে কেটে যাওয়া বা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভানা থাকে না। তবে আপনি চাইলে রজারও ব্যবহার করতে পারেন। রেজার ব্যবহারও সম্পূর্ণ নিরাপদ না। বাজারে বেশ কিছু ইলেকট্রিক শেভার রয়েছে আপনার বাজেট অনুসারে ভালো ব্রান্ডের দেখে একটি নিয়ে নিতে পারেন। আপনি চাইলে ফিলিপস ওয়ান ব্লেড ব্যবহার করতে পারেন।
পুরুষাঙ্গের চুল কাটার নিয়ম
পুরুষাঙ্গের চুল কাটা শুরু করার আগে এর চারপাশ সামান্য গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। আপনি চাইলে পুরো শরীরেও পানি ঢালতে পারেন। এতে আপনার গোপনঅঙ্গের পাশে থাকে চুল বা লোমের স্কিন নরম হবে। ফলে শেভ করতে সুবিধা হবে এবং ব্যাথা অনুভব হবে না।
আপনার গোপন অঙ্গের চুল তুলনামুলক বড় হয়ে গেলে ট্রিমারে বড় সাইজের কম্ব বা ক্লিপ লাগিয়ে ছোট করে নিন। এর পর শেভার ব্যবহার করুন। আপনি যদি ট্রিমার দিয়ে আপনার পুরুষাঙ্গের চুল কাটতে চান তাহলে নিচের দিক দিয়ে ট্রিম করা শুরু করুন।
চুল কাটা শেষ হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে ফেলুন। শেভ করার পর সাবান ব্যবহার না করা উত্তম। এতে আপনার পুরুষাঙ্গ ও এর পাশের স্কিন রুক্ষ হয়ে যেতে পারে এবং অনেক সময় জ্বালা পোড়া করতে পারে। আপনার পুরুষাঙ্গের চুল কাটার পর অ্যালকোহলমুক্ত অ্যান্টিসেপটিক লোশন ব্যবহার করুন, যাতে কোন ইনফেকশন না হয়। আপনার চুলকানি বা এরকম কিছু থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিন।
ইসলামে পুরুষাঙ্গের চুল কাটার নিয়ম ও নির্দেশনা:
হাদিস অনুযায়ী, ৪০ দিনের মধ্যে অবশ্যই একবার গোপন অঙ্গের চুল কেটে ফেলতে হবে। ৪০ দিনের বেশি দেরি করা মাকরূহ (নিন্দনীয়) হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। এছাড়াও রুষাঙ্গের চুল কাটার সময় পর্দার যত্ন নেওয়া জরুরি। অর্থাৎ একান্তে গোপনে কাটতে হবে। অন্যের সামনে উলঙ্গ হয়ে গোপন স্থানের চুল কাটা যাবে না। পাশাপাশি আপনার মধ্যে নিয়ত থাকতে হবে যে, আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই সুন্নত পালন করছেন।
তবে কেউ নিজের হাতে না পারলে চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া অন্যের সাহায্য নেওয়া ঠিক নয়, কারণ এটি পর্দার লঙ্ঘন।
সতর্কতা:
- আপনার গোপন স্থানের চুল কাটার জন্য ব্যবহৃত ট্রিমার বা কাঁচি অন্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না। এমনকি আপনার সঙ্গীর সাথেও না। কারন এই স্থানে অনেক জীবাণু থাকে যা থেকে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- খোলা ব্লেড বা রেজর ব্যবহার করে পুরুষাঙ্গের চুল কাটা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে কেটে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
পুরুষাঙ্গের চুল কাটার জন্য সেরা শেভার ও ট্রিমার
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন বাজেটের ও ব্রান্ডের কয়েক ডজন ট্রিমার ও শেভার রয়েছে। তবে সব ট্রিমার পুরুষাঙ্গের চুল কাটার জন্য উপযুক্ত না। পুরুষদের অবাঞ্ছিত চুল কাটার জন্য বাংলাদেশের বাজারে থাকা ভালো মানের কয়েকটি ট্রিমার এবং শেভার হচ্ছে – PHILIPS MG3721/65, Philips BT3302/15, Kemei KM-600, VGR V-080, PHILIPS OneBlade, Philips S1121/41, VGR V-080, PHILIPS BG3005/15, Philips MG3710/65।
উল্লেখ্য এখানে বেশ কয়েকটি মাল্টিফাংশনাল ট্রিমার ও শেভার সাজেস্ট করা হয়েছে যেগুলোতে আলাদা আলাদা কিট রয়েছে যেগুলো দিয়ে আপনি ট্রিম ও শেভ করতে পারেন।
সর্বশেষ
ইসলামে পুরুষাঙ্গের চারপাশের চুল পরিষ্কার করা সুন্নত এবং তা প্রতি ৪০ দিনের মধ্যে অন্তত একবার করা উচিত। এটি শরীর ও আত্মার পরিচ্ছন্নতার অংশ। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতা মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, যা যৌন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত পুরুষাঙ্গের চুল কাটুন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।