বাংলাদেশে সেরা ৫টি হেয়ার স্ট্রেইটনার – দাম ও বিস্তারিত

হেয়ার স্ট্রেইটনার বা ফ্লাট আয়রন বিশ্বব্যাপী কোঁকড়ানো, ঢেউখেলানো বা ঘষা-মাজা চুলকে চিকন, সোজা ও চকচকে করে তোলার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হেয়ার স্টাইলিং টুলগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো এর সহজ ব্যবহার, সুলভ মূল্য এবং সরাসরি ও কার্যকরী ফলাফল। এছাড়াও চুলের টেক্সচার উন্নত করতে, নানা রকম স্টাইল তৈরি করতে এবং চুলকে হাইড্রেটেড ও ম্যানেজেবল রেখে আর্দ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করতেও হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যাপকভাবে কার্যকরী।

সম্মানিত পাঠক, আপনি হয়তো – হেয়ার স্ট্রেইটনার কোনটা ভালো, বাজাটের মধ্যে সেরা হেয়ার স্ট্রেইটনার মেশিন কোনটি, কিভাবে সঠিক ও অরিজিনাল হেয়ার কেয়ার ও হেয়ার স্টাইলিং টুলসটি খুঁজে পাবেন ইত্যাদি লিখে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। তবে আজকের লেখায় আপনার সকল খোঁজার অবসন ঘটবে বলে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের আবহাওয়ার কারণে এই অঞ্চলের মানুষের চুলের যত্নে সকল প্রকার হেয়ার স্ট্রেইটনার উপযোগী নয়। আজকের লেখাজুড়ে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং চুলের ধরন অনুসারে সেরা কয়েকটি হেয়ার স্ট্রেইটনার সম্পর্কে। পাশাপাশি লেখাজুড়ে বাংলাদেশের মানুষের বাজেটের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে যেকোনো বাজেট রেঞ্জে আপনি আপনার পছন্দের ও কার্যকরী হেয়ার স্ট্রেইটনারটি খুঁজে পাবেন বলে আমি আশা করছি।

১) ফিলিপস এইচপি ৮৩০২ – Philips HP8302 Selfie Straightener

বাংলাদেশের উইজারদের কাছে ফিলিপ বেশ পরিচিত। তাই ফিলিপস নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর সেরা ও ভালো মানের হেয়ার স্ট্রেইটনারের তালিকায় সবার প্রথমেই রয়েছে ফিলিপস এইচপি ৮৩০২ সেলফি হেয়ার স্ট্রেইটনার-এর নাম। যারা ভ্রমণপ্রিয় অথবা প্রথমবারের মতো একটি নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের স্ট্রেইটনার খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ পছন্দ। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল ওয়ার্ল্ডওয়াইড ভোল্টেজ (১১০-২৪০V) সাপোর্ট, যা দেশ-বিদেশে যেখানেই যান না কেন চার্জ নিয়ে চিন্তামুক্ত।

সিল্কপ্রো কেয়ার টেকনোলজি যুক্ত সিরামিক প্লেট চুলের উপর নমনীয়ভাবে মুভ করতে পারে, এর ফলে হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহারের সময়ে ঘর্ষণজনিত কারনে চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এর আর একটি দারুন ফিচার হচ্ছে মাত্র ৬০ সেকেন্ডেই এটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই এটি হিট হয়ে যায়। সর্বোচ্চ ২১০°C পর্যন্ত তাপমাত্রা চুলকে সহজেই মসৃণ করে তুলতে সক্ষম। যারা বাড়িতে সেলুন-কোয়ালিটি ফলাফল চান, তারা এটি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বেছে নিতে পারেন। বাংলাদেশের বাজারে ফিলিপস এইচপি ৮৩০২ সেলফি হেয়ার স্ট্রেইটনার এর দাম ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকার আশেপাশে।

২) ভি অ্যান্ড জি ভি-৪ হেয়ার স্ট্রেইটনার – V&G V-1248 Hair Straightener

আপনার বাজেট যদি ১০০০ টাকার বেশি এবং ২০০০ টাকার কম হয়ে থাকে এবং ঘন বা কোঁকড়ানো চুলের জন্য একটি শক্তিশালী হেয়ার স্ট্রেইটনারটি কিনতে চান তাহলে আপনার জন্য ভি অ্যান্ড জি ভি-৪ প্রফেশনাল হেয়ার স্ট্রেইটনার। একটু বেশি তাপমাত্রা ও নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ চাইলে ভি অ্যান্ড জি ভি৪ প্রোফেশনাল হেয়ার স্ট্রেইটনার দারুণ একটি অপশন। এই হেয়ার স্ট্রেইটনারটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার হচ্ছে টি মাত্র ৩০ সেকেন্ডে গরম হয়ে ওঠে এবং এটি ২৩০°C পর্যন্ত তাপ দিতে পারে। এতে থাকা ডিজিটাল ডিসপ্লে আপনাকে সঠিক তাপমাত্রাটি সেট করতেও সাহায্য করবে। এই হেয়ার স্ট্রেইটনার আরও একটি ভালো দিক হচ্ছে, এর অ্যান্টি-স্ট্যাটিক টেকনোলজি বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়ায় ফ্রিজ ও ফ্লাইওয়ে কমিয়ে চুলকে স্লিক ও শাইনী রাখতে সহায়তা করে। সাশ্রয়ী মূল্যের মধ্যে প্রফেশনাল ফিচার পাওয়ার জন্য এটি হতে পারে একটি শীর্ষস্থানীয় পছন্দ।

৩) কেমেই কেএম-২০৫৩ – Kemey KM-2053

কেমি বাংলাদেশের গ্রুমিং এর বাজারে বেশ পরিচিত একটি নাম। বাজেটের মধ্যে প্রোডাক্ট সেল করে ব্রান্ডটি ইতিমধ্যেই সবার নজরে এসেছে। আপনার বাজেট যদি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে থাওলে কেমেই কেএম-২০৫৩ হেয়ার স্ট্রেইটনারটি হতে পারে চমৎকার একটি পছন্দ। এটি মূলত একটি ২-ইন-১ ডিভাইস, তাই এটি দিয়ে হেয়ার স্ট্রেইট করার পাশাপাশি কার্লও তৈরি করতে পারবেন। পাশাপাশি এতে রয়েছে সিরামিক কোটিং যা চুলের ক্ষতি রোধ করে। নতুন যারা স্টাইলিং শুরু করছেন, অথবা যাদের অল্প বাজেটে একই সাথে স্ট্রেইটনার ও কার্লও খুঁজছেন তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার প্রারম্ভিক পছন্দ হতে পারে।

৪) ভি অ্যান্ড জি ভি৫ – V&G V5 Professional Hair Straightener

বাংলাদেশের বাজারে ভালো মানের হেয়ার স্ট্রেইটনারের তালিকায় আরও একটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি ডিভাইস হলো ভি অ্যান্ড জি ভি৫ প্রোফেশনাল হেয়ার স্ট্রেইটনার। আপনার বাজেট যদি ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে হয়, তাহলে এটি আপনার জন্য একটি দারুণ পছন্দ হতে পারে।

যাদের চুল অত্যন্ত ঘন, শক্ত বা স্বাভাবিকভাবে কোঁকড়ানো, তাদের জন্য সাধারণত উচ্চতর তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে। ভি অ্যান্ড জি ভি৫ প্রোফেশনাল হেয়ার স্ট্রেইটনার-এ আছে টাইটানিয়াম-কোটেড প্লেট এবং সর্বোচ্চ ২৫০°C তাপমাত্রার ক্ষমতা, যা শক্ত ও ঘন কোঁকড়ানো চুলকেও দ্রুত ও সহজে মসৃণ করতে পারে। পাশাপাশি, টাইটানিয়াম কোটিং চুলের সাথে প্লেটের ঘর্ষণ কমিয়ে এটিকে স্বাস্থ্যকর ও চকচকে রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়াও, এই স্ট্রেইটনারটিতে ডুয়াল ভোল্টেজ সাপোর্ট এবং স্বয়ংক্রিয় শাট-অফ ফিচারের মতো প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে ভি অ্যান্ড জি ভি৫ মডেলটির দাম সাধারণত ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।

৫) ফিলিপ্স বিএইচ৫২০ – Philips BHS520 Hair Straightener

আপনার বাজেট যদি ৭০০০, ৮০০০, ৯০০০ কিংবা ১০০০০ টাকা এরকম হয়ে থাকে তাহলে আপনার জন্য Philips BHS520 Hair Straightener 5000 Series। এতে থাকা আর্গান অয়েল ইনফিউজড সিরামিক প্লেট শুধু একটি বিজ্ঞাপনের কথা নয়, এটি সত্যিই কাজ করে। দ্বিতীয় যে বিষয়টি এই প্রোডাক্টটিকে আলাদা করে তা হল থার্মোশিল্ড টেকনোলজি। সাধারণ স্ট্রেইটনার গুলোতে প্লেটের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় বেশি গরম থাকে, ফলে চুলের কিছু অংশ পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। কিন্তু এই টেকনোলজি পুরো প্লেট জুড়ে তাপমাত্রা সমানভাবে বন্টন করে, যার ফলে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত নিরাপদে ও সমানভাবে স্টাইল করা সম্ভব হয়। চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে এটি সত্যিই একটি যুগান্তকারী ফিচার।

পাশাপাশি এতে রয়েছে প্রশস্ত ১০৫ মিমি প্লেট এবং প্লেটের মসৃণ গ্লাইডিং মুভমেন্ট ব্যস্ত সকালে দ্রুত প্রস্তুত হওয়ার জন্য এই গতি খুবই কার্যকরী। স্ট্রেইটেন, কার্ল বা ওয়েভ যে কোন স্টাইল তৈরি করার জন্য এটি উপযোগী। পাশাপাশি, ১২০°C থেকে ২৩০°C পর্যন্ত ১২টি ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রার সেটিং রয়েছে, যা পাতলা চুল থেকে শুরু করে ঘন কোঁকড়ানো চুলসহ প্রায় সব ধরনের চুলের জন্য উপযুক্ত তাপ নির্বাচনের সুযোগ দেয়। আমার ব্যাক্তিগতভাবে যে বিষয়টি বেশি ভালো লেগেছে তা হচ্ছে এই স্ট্রেইটনারে অটো শাট-অফ ফিচার আছে যার ফলে ৩০ মিনিট পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভুলবশত চালু রেখে যাওয়ার ফলে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়াও, প্লেট লক সিস্টেম এবং হিট-রেসিস্টেন্ট রোল-আউট ম্যাট থাকায় ভ্রমণের সময় এটি নিরাপদে ব্যাগে রাখা যায় এবং কোথাওও গরম হতে পারেনা।

হেয়ার স্ট্রেইটনার কেনার আগে অবশ্যই যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন

বাংলাদেশের বাজারে হেয়ার স্ট্রেইটনার কেনার সময় শুধু দাম কিংবা ব্র্যান্ড দেখে সিদ্ধান্ত নিলে ভুল করতে পারেন। বরং আপনার চুলের প্রকৃতি, বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়া এবং যন্ত্রটির টেকসই ব্যবহার, এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে পছন্দ করা উচিত।

প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে প্লেটের উপাদানের দিকে। সিরামিক প্লেট সাধারণ ও পাতলা চুলের জন্য, ট্যুরমালিন সিরামিক ফ্রিজি ও শুষ্ক চুলের জন্য এবং টাইটানিয়াম প্লেট অত্যন্ত শক্ত ও ঘন কোঁকড়ানো চুলের জন্য উপযোগী।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভোল্টেজ সামঞ্জস্যতা। বাংলাদেশে ২২০-২৪০ ভোল্টের জন্য উপযুক্ত এমন স্ট্রেইটনারই কিনুন, নয়তো যন্ত্রটি পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

তৃতীয়ত, অ্যাডজাস্টেবল টেম্পারেচার কন্ট্রোল থাকা জরুরি, যাতে আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী তাপমাত্রা ঠিক করে নিতে পারেন। এছাড়া বাংলাদেশের আর্দ্রতা মোকাবেলায় আয়নিক টেকনোলজিযুক্ত মডেল চুলের ফ্রিজ কমাতে বিশেষ সাহায্য করে।

সর্বোপরি, বাজেট নির্ধারণের সময় শুধু সস্তার দিকেই না দেখে, যেসব ফিচার আপনার চুলের যত্নে realmente প্রয়োজন, সেগুলো পাওয়া যায় কিনা সেদিকেও নজর দিন।

সর্বশেষ

আশা করি, এই গাইডলাইন আপনাকে বাংলাদেশের বাজারে আপনার জন্য উপযুক্ত এবং কার্যকরী হেয়ার স্ট্রেইটনার নির্বাচনে সাহায্য করবে। আপনার চুলের ধরন এবং বাজেট বিবেচনা করে উপযুক্ত পণ্যটি বেছে নিন, এবং নিয়মিত চুলের যত্ন নিতে ভুলবেন না।

Shopping Cart
Scroll to Top